মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণহীন। রয়টার্স ফাইল ছবিমিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কারণে দেশটির সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন, ইয়াঙ্গুন ও ইউরোপভিত্তিক ১২ জনের বেশি কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তার কথায় এমন আভাস পাওয়া যায় বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রোববার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস এ জন্য আরও কিছু সময় নিতে পারে। রাখাইনে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য সহায়তা বাড়ানোরও আলোচনা চলছে।
এক মাস আগেও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি আলোচনায় ছিল না জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এতেই প্রমাণিত হয় সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের কতটা চাপে ফেলেছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেনাবাহিনীর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বিশ্বজুড়ে যখন শান্তিতে নোবেলজয়ী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির সমালোচনা চলছে, তখন পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে খুব কমজনই তাঁর (সু চি) বিকল্প দেখতে পাচ্ছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ১৬ অক্টোবর মিয়ানমার প্রসঙ্গে বৈঠকে বসবেন। যদিও তাঁরা মনে করছেন না খুব শিগগির নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নেদারল্যান্ডসের উন্নয়ন করপোরেশনবিষয়ক মন্ত্রী উলা টরনায়েস রয়টার্সকে বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওরপ আরও চাপ প্রয়োগ করতে’ কোপেনহেগেন বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে আনার চেষ্টা করছে।
মিয়ানমার নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা সম্পর্কে অবগত দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াংসহ কয়েকজন জেনারেল এবং রোহিঙ্গাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগে রাখাইন বৌদ্ধ মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিবেচনা চলছে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধ এবং তাঁদের সঙ্গে আমেরিকানদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধসহ আরও কিছু বিষয় আসতে পারে। মার্কিন ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইউরোপ, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে আলোচনার কারণে ওয়াশিংটন এ বিষয়ে সাবধানতার সঙ্গে এগোচ্ছে।
ইয়াঙ্গুনে নিয়োজিত ইউরোপীয় এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এই সংকট নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। তারা এ বিষয়ে একমত যে সমস্যার মূলে সেনাবাহিনী, বিশেষত কমান্ডার ইন চিফ, যাঁকে যেকোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপে ‘টার্গেট’ করা দরকার।
ইয়াঙ্গুনভিত্তিক কূটনীতিকেরা বলছেন, আলোচনার দ্বার খোলা রাখতে প্রথম পর্যায়ে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ প্রতীকী হতে পারে। তাঁরা উদাহরণ টেনে বলেন, গত বছর ব্রাসেলস, বার্লিন ও ভিয়েনা সফর করা মিয়ানমার সেনাপ্রধানকে ইউরোপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
১৮ মাস আগে সু চি ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমারের সঙ্গে পশ্চিমাদের সুসম্পর্কে দেখা দিলেও চীনের তুলনায় তেমনটা নয় বলে স্বীকার করেন কূটনীতিকেরা। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তেমন বিনিয়োগ নেই, সামরিক সংশ্লিষ্টতাও কম।
এ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নিলে অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বা অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে, যা সু চি ও সেনাবাহিনীর সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।
মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ নিয়ে ব্রাসেলসভিত্তিক একজন ইইউ কূটনীতিক বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক চাপ বাড়তে পারি, আবার সেখানে আমাদের যে অর্থায়ন আছে, তা খতিয়ে দেখতে পারি। আমাদের মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা আছে…কিন্তু নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ অবস্থার উন্নতি না হলে মিয়ানমারের উন্নয়নে কোনো বিনিয়োগ করবে না ইউরোপীয় কমিশন।’
ইইউর এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘এখানে অস্ত্র বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। আমরা নিয়মিত আলোচনা করছি, আমাদের কি মিয়ানমারকে সংস্কারের জন্য পুরস্কৃত করব, নাকি ধীরে ধীরে ওই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করব, নাকি আরও কঠোর হব।’
২০১২ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সরাসরি দেশ পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়ালে দেশটির ওপর থেকে ইইউ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। তবে নব্বইয়ের দশক থেকে চলে আসা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর থেকে বেশির ভাগ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা রেখেছে।
ওয়াশিংটনে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা না থাকলেও আগামী নভেম্বরের প্রথমার্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এশিয়া সফরের সময় মিয়ানমার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনায় পৌঁছানোর আশা করছে ওয়াশিংটন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে একটি কড়া বার্তা দিতে চাইছে প্রশাসন। কিন্তু পাছে না এই বার্তাই আবার দেশটির ওপর চীনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব আরও বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তবে আবারও মিয়ানমারের ওপর বড় পরিসরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে প্রশাসনের তেমন সমর্থন নেই। রয়টার্সের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অভ্যন্তরীণ চিন্তাভাবনা কী, তা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস।